রমজান উদযাপনে মৌরিতানিয়ানদের নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য রয়েছে।
মৌরিতানিয়ানরা নিজ চোখে চাঁদ দেখতে পছন্দ করে। চাঁদ দেখার সরকারি সংস্থা থাকার পরও তারা নিজেরা চাঁদ দেখে। রমজানের চাঁদ দেখার পর পরস্পরকে অভিনন্দন জানায় এবং ‘তোমার রমজান বরকতময় হোক’, ‘আল্লাহ আমাদেরকে রোজা রাখার ও তাহাজ্জুদ আদায়ের তাওফিক দিন’ ইত্যাদি বাক্যে দোয়া করে।
ইফতারের আগে পবিত্র মক্কা-মদিনার সম্প্রচারিত তিলাওয়াত শোনা মৌরিতানিয়ানদের প্রিয় অভ্যাসগুলোর একটি।
রমজানে মৌরিতানিয়ার সব বয়সী মুসলমান মসজিদে উপস্থিত হয়। আসরের নামাজের পর বেশির ভাগ মসজিদে ফিকহ (ইসলামী আইন), হাদিস ও সিরাত বিষয়ে আলোচনা এবং ধর্মীয় সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ইফতার ও তারাবির পর তারা আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করে।
রমজানে তারা শিশুদের ধীরে ধীরে রোজা রাখায় অভ্যস্ত করে তোলে। এ জন্য তাদের নানা ধরনের পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করে। রমজানের শেষ দশকে তারা ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং ইতিকাফের মাধ্যমে কদরের রাত অনুসন্ধান করে।
সরকার দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে খেজুর, চাল, গম, চিনি, দুধ ও মাখন পাঠায়। এসব উপকরণ মসজিদগুলোতে হস্তান্তর করা হয় এবং তারা তা দিয়ে অসহায় রোজাদারের জন্য খাবার তৈরি করে বিতরণ করে।
আর্থিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলো অসহায় মানুষকে ইফতার করায় এবং দরিদ্র্য পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেয়।
মৌরিতানিয়ার মুসলিমরা সাদাসিধে ইফতার করতে পছন্দ করে। তারা সাধারণত খেজুর ও পানি দ্বারা ইফতার করে। গম, যব, শস্য বা শাকসবজি দ্বারা তৈরি স্যুপ খায়। ইফতারে মৌরিতানিয়ানদের প্রিয় খাবার ইজরেক, যা দই বা গুঁড়া দুধের সঙ্গে পানি ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। তারাবির নামাজের পর তারা ভারি খাবার খায়। এ সময় তারা তাজিন নামের এক ধরনের বিশেষ খাবার গ্রহণ করে, যা গোশত, আলু ও সবজি দ্বারা তৈরি করা হয়। এ ছাড়া রমজানে তারা ভেড়ার গোশতের সঙ্গে ‘কাসকাস’ নামক বিশেষ খাবার খেয়ে থাকে। সাহরিতে মৌরিতানিয়ান মুসলিমরা হালকা খাবার খায়। যেমন দুধ-ভাত, স্থানীয় ভাষা যাকে কোসি বলা হয়। এ ছাড়া সাহরিতে তারা চা-ও পান করে।
রমজানের আগে মাথা মুণ্ডানো মৌরিতানিয়ার বিরল রীতি। প্রধানত শিশুরা তা করে থাকে। তাদের ধারণা, রমজানে গজানো চুল তাদের জন্য বরকত বয়ে আনবে। রমজানে যে চুল ওঠে তাকে তারা ‘রামাদান ফ্লুফ’ বা রমজানের সম্মান বলে থাকে।
মৌরিতানিয়ান মুসলিমরা রমজানের প্রথম দশককে ‘আশারাতুল খুয়ুল’ (ঘোড়ার দশক), দ্বিতীয় দশককে ‘আশারাতুল জিমাল’ (উটের দশক) এবং শেষ দশককে ‘আশারাতুল হামির’ (গাধার দশক) বলে। এর দ্বারা তারা বোঝাতে চায় রমজানের শুরুতে রোজাদারের উদ্যম থাকে ঘোড়ার মতো, এরপর তা উটের গতি পায় এবং শেষ দশকে গাধার মতো ধীর গতিতে চলে।
তথ্যসূত্র : ইসলাম ওয়েব ডটনেট ও ইউএনএ-ওআইসি ডটঅর্গ